সারা দেশে এখন প্রকৃত নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
মঙ্গলবার, মার্চ ৮, ২০২২ ৬:২৭ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
মঙ্গলবার, মার্চ ৮, ২০২২ ৬:২৭ অপরাহ্ণ
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
দেশে দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে এই সরকারকে হঠানোর বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নিত্যপণ্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী যুবদল আয়োজিত সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এই বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবদলের প্রতিটি ওয়ার্ড ছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ থেকে নেতাকর্মীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে যোগ দেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন- করোনার পরে এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে জিনিসপত্রের দাম সব জায়গায় বেড়েছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ কবে থেকে শুরু হলো? আর কবে থেকে এ দেশের মানুষ চিৎকার করছে তেলের দাম কমাও, চালের দাম কমাও, ডালের দাম কমাও, আমরা আর পারছি না। ২ বছর ধরে করোনায় যে চুরি-ডাকাতি আপনারা করেছেন স্বাস্থ্য খাতে এবং করোনাকে কেন্দ্র করে, প্রণোদনা দেয়ার নামে বড়লোককে সরকারি টাকা দিয়েছেন, গরিবকে আরও গরিব করেছেন। সে কথার জবাব কে দেবে, প্রধানমন্ত্রী? তিনি বলেন, অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা সবাই বলছেন, এমনকি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, বাংলাদেশে এই সময়ে দরিদ্রের সংখ্যা আরও ২ শতাংশ বেড়েছে। সারা দেশে এখন প্রকৃত নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। মানুষ বলতে পারে না, টিসিবি’র ন্যায্যমূল্যের ট্রাকের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় মুখে ‘মুখোশ’ পরে, সেখানে লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। ধাক্কাধাক্কি করে, মারামারি করে কোনো রকমে ১ লিটার তেল অথবা চাল, একটু আলু পেল।
‘দেশে প্রকৃত নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে’ বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মানুষ বলতে পারে না। ওই টিবিসি’র ন্যায্যমূল্যের ট্রাকের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় মুখোশ পরে। এরপরে সেখানে লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়, সেখানে ধাক্কা-ধাক্কি করে, মারামারি করে কোনো রকমে এক লিটার তেল অথবা একটু ডাল, চালের জন্য। বাণিজ্যমন্ত্রী যেদিন বললেন, জিনিসপত্রের দাম কমাও নইলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেদিনই পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজি বেড়ে গেল। এর অর্থ কী? অর্থ হচ্ছে এই সরকারের বাজারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, এই যে বাজারের সিন্ডিকেট। সমস্ত সিন্ডিকেটের প্রধান হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতারা, আজকে বাংলাদেশে যত চাঁদাবাজি, যত ঘুষ-খাওয়া সবকিছুর মূল নেতা হচ্ছে এই আওয়ামী লীগ। তারা সারাজীবনই যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই তারা জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার চেষ্টা করেছে। ১৯৭২ থেকে ’৭৫ সাল- একই অবস্থা ছিল এবং তাদের অযোগ্যতা, দুর্নীতির কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গিয়েছিল।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারকেই দায়ী করে তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে কেন? এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে যে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো, আরেকটি কারণ হচ্ছে গ্যাসের দাম বাড়ানো। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, এলপিজি গ্যাস আমদানি করে কে জাতি জানতে চায়। তিনি হচ্ছেন সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি যতবার এলপিজি গ্যাস আমদানি করেছেন ততবার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল দুবাই গেছেন। দুবাই যাওয়ার আগে তিনি কিছু বক্তৃতা করেছেন। তার মধ্যে একটি জায়গায় তিনি বলেছেন, করোনাকালে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জিনিসপত্রের দাম সব জায়গায় বেড়েছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ কবে থেকে শুরু হলো? আর কবে থেকে দেশের মানুষ চিৎকার করছে যে, তেলের দাম কমাও, চালের দাম কমাও, ডালের দাম কমাও, আমরা আর পারছি না। আর করোনার দুই বছর ধরে যে চুরি-ডাকাতি আপনারা করেছেন স্বাস্থ্য খাতে, করোনাকে কেন্দ্র করে প্রণোদনা দেয়ার নামে সরকারি টাকা দিয়েছেন গরিবকে গরিব করার জন্য সে কথার জবাবটা দেন প্রধানমন্ত্রী। আজকে অর্থনীতির যারা বিশেষজ্ঞ তারা সবাই বলছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সবাই বলেছে, বাংলাদেশে এই বছরে গরিবের সংখ্যা আগের চেয়ে দুই পারসেন্ট বেড়েছে।
‘সরকার হঠানো ছাড়া বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, কলকাতায় যদি ট্রাম ভাড়া চার পয়সা বাড়ে, তো কলকাতা বন্ধ হয়ে যায়, জিনিসপত্রের দাম বাড়লে কলকাতা বন্ধ হয়ে যায়। এরা (আওয়ামী লীগ সরকার) ১৪ বছর ধরে এতো নির্যাতন-নিপীড়ন করছে যখন আমরা ঠিক সেভাবে বন্ধ করতে পারছি না। কিন্তু বন্ধ করতে হবে আমাদেরকে। সমস্ত অন্যায়-নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ করতে হলে, মানুষকে বাঁচাতে হলে, দরিদ্র মানুষের দুই বেলা আহারের ব্যবস্থা করতে হলে এই সরকারকে হঠানো ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। এই সরকার যদি আরো কিছুদিন থাকে তাহলে এই দেশের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। এরা বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে পরিকল্পিতভাবে, এরা প্রশাসনযন্ত্র আমলাতন্ত্রকে দলীয়করণ করেছে, শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের দলীয় লোকজন নিয়োগ দিয়ে সেখানে দুর্নীতির আখড়া তৈরি করেছে। আজকে দুর্নীতি এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যেখানে কোথাও আর দুর্নীতি বাকি নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে, সকলকে আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে আহবান জানাতে চাই, আসুন আমরা সবাই সমস্ত রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ কর্তৃত্ববাদী সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। আর সরকারকে বলতে চাই, আপনাদের দিন শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং ভালোয় ভালোয় পদত্যাগ করুন, পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেন, আজকে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। তারা সন্তানের স্কুলের বেতনের টাকা পরিশোধ করবে না তারা চাল-ডাল কিনবে। তাদের ঘরে ঘরে অশান্তি চলছে, দুশ্চিন্তায় আছে তারা। অথচ সরকার নির্বিকার। সরকারের সেদিকে নজর নাই। সরকারকে এখনো বলব, সোজা পথে সোজাভাবে চলুন। ভালো হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন, জনগণের অধিকার ফেরত দেন, জনগণের ভোটের অধিকার ফেরত দেন। তিনি বলেন, ১০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এই ১০ লাখ কোটি টাকা যদি দেশে বিনিয়োগ হতো, তাহলে অনেক শিল্প-কারখানা হতো। অনেক রফতানিযোগ্য পণ্য উৎপাদিত হতো। কর্মসংস্থান হতো। তাহলে আমাদের যুবসমাজকে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরতে হতো না। দেশে যদি কাজ থাকত তাহলে কোনো যুবক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে বিদেশে যেত না। সেদিকে সরকারের কোনো নজর নাই। বিএনপির এই নেতা বলেন, ওপার থেকে সীমান্তে একের পর এক গুলি করে পাখির মতো মানুষ মারছে। বর্ডার গার্ড নীরব, তাহলে অস্ত্র কেন, অস্ত্র কী দেশের মানুষকে মারার জন্য? জনগণের টাকায় অস্ত্র কেনে সরকার। সেই অস্ত্র ব্যবহার করে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে। অন্যায়ের প্রতিবাদ যারা করে তাদের বিরুদ্ধে। গণতন্ত্র যদি না থাকে, তাহলে আইনের শাসন থাকে না। জবাবদিহিতা থাকে না। যখন গণতন্ত্র থাকে না তখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব নিয়ে পড়ে টানাটানি। তিনি বলেন, সরকার মনে করে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আক্রমণ নিয়ে বিশ্ববাসী ব্যস্ত। এই সুযোগে আরও কিছু অপকর্ম এবং পুলিশ বাহিনী মনে করছে, তাদের ওপর আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না। আসবে কি আসবে না, তা জানি না। আমি বলব সোজা পথে সোজাভাবে চলুন। ভালো হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে, পোশাক পরে প্রফেশনাল গুন্ডা-মাস্তানের মতো যদি জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ান তাহলে দেশে গৃহযুদ্ধ অনিবার্য। কারণ কেউ হাত গুটিয়ে ঘরে বসে থাকবে না। সরকারি দলের লোকদের বলব, ভালো হয়ে যান। ভোটাধিকার ফেরত দিন। দেশে যদি এত উন্নয়ন করেন তাহলে জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে ভয় পান কেন? কারণ উন্নয়নের নামে জনগণের পকেট কেটেছেন। উন্নয়নের নামে জনগণের ভোটাধিকার বঞ্চিত করেছেন। তাই জনগণের মন আজ বিক্ষুব্ধ। যে কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ ঘটবে। এই বিস্ফোরণ ঠেকিয়ে রাখার ক্ষমতা এই সরকারের নাই। তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারী যাদের বেতন-ভাতা জনগণের টাকায় তাদেরকে বলব- জনগণের পক্ষে আসুন, জনগণের পক্ষে নামুন। এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন না। দেশটাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবেন না। কারণ দেশটা আমার আপনার সকলের। দেশটা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। তিনি আরও বলেন, অবিচারের প্রথম শিকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, দ্বিতীয় শিকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমরা অপেক্ষায় আছি, আমাদের অনেক জেল দিয়েছেন, সাজা দিয়েছেন। আমাদের হয়ত জেল দিবেন, সাজা দিবেন, কারাগারে দিবেন। তারপরও আমার মনে হয় আপনাদের শেষ রক্ষা হবে না।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, সহ-সভাপতি আবদুল খালেক হাওলাদার, আলী আকবর চুন্নু, গোলাম রাব্বানী, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, রুহুল আমিন আকিল, জাকির হোসেন সিদ্দিকী, কাজী আজিজুল হাকিম আরজু, জাকির হোসেন নান্নু, মজিবুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন প্রমুখ। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহবায়ক গোলাম মাওলা শাহীন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাজ্জাদুল মিরাজসহ যুবদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।