সিলেটের বিশ্বনাথের ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও নিয়ে তোলপাড়
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, এপ্রিল ৩, ২০২২ ৭:৩১ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
রবিবার, এপ্রিল ৩, ২০২২ ৭:৩১ অপরাহ্ণ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
সিলেটের বিশ্বনাথের ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও নিয়ে তোলপাড় চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা। এ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে; বিশ্বনাথ উপজেলার বিএনপি দলীয় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীর হাতে নাজেহাল হচ্ছেন উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও একাধিকবারের ইউপি চেয়ারম্যান লিলু মিয়া। সুহেল ও লিলু দু’জন বন্ধু। বিএনপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর কাছের নেতা ছিলেন তারা দু’জন। রাজনৈতিক পরিক্রমায় আজ দু’জন একজন আরেকজনের কাছ থেকে অনেক দূরে। বলা হচ্ছে, লিলু মিয়ার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সুহেল। উপজেলা পরিষদের মসনদ হারানোর পাশাপাশি বিএনপিতেও এখন আর নেই তিনি।
আর এসবের পিছনে কলকাঠি নেড়েছেন লিলু মিয়া। তবে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের দাবি- ইলিয়াস আলীর পরিবারের হাত ধরেই বিশ্বনাথের অধিকর্তা হয়েছিলেন সুহেল। পরবর্তীতে একের পর এক বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তার সবই গেছে। এখন নিঃস্ব সুহেল। ক্ষ্যাপা মূর্তি ধারণ করেছেন। তার হাতে লিলু মিয়া আক্রান্ত হওয়ার পর বিশ্বনাথ বিএনপি’র নেতারা সুহেলকে নিয়ে আতঙ্কে আছেন। কারণ- সুহেলের তালিকায় বিএনপি’র কয়েকজন নেতার নামও রয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। ঘটনা গত শুক্রবার রাতের। ওইদিন বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় অলঙ্কারী ইউপির একাধিকবারের সাবেক চেয়ারম্যান লিলু মিয়া যাত্রীবাহী বাসযোগে বিশ্বনাথ থেকে সিলেটে যাচ্ছিলেন। তিনি যে বাসে উঠেছিলেন সেই বাসেই ওঠেন সুহেল আহমদ চৌধুরী। গাড়িতে উঠে লিলু মিয়াকে দেখেই ক্ষেপে উঠেন সুহেল। যাত্রীরা জানান, প্রথমে গাড়িতে ওঠেন লিলু মিয়া। এরপর সুহেল ওঠেন। লিলুকে দেখেই সুহেল গাড়ির ভেতরেই অকথ্য গালিগালাজ শুরু করেন। এতে বিব্রত হন লিলু মিয়া। যাত্রীরাও বিব্রত হন। এক পর্যায়ে গাড়ির ভেতরেই লিলুকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা চালানো হয়। বিশ্বনাথ সদর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সুহেলের বাড়ি কানিকোনা গ্রামের ব্রিজের কাছে যাত্রীবাহী বাসটি আসা মাত্র আরও কয়েকজন যুবকের সহযোগিতায় লিলু মিয়াকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। সঙ্গে নামেন সুহেলও। ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপসে দেখা যায়; সুহেল আহমদ চৌধুরী লিলু মিয়ার উদ্দেশে বলছেন, ‘তোরে উপজেলা বিএনপি’র সেক্রেটারি আমি বানাইছি। আমি নেতা বানাইছি। তোরে কে চিনতো। তুই আমার বিরোধিতা করোস। তুই মনে করোস জানাইয়ার পুয়াইনতে তরে বাচাইলিবা।’ এসব বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজনকে ভিডিও করার নির্দেশ দিয়ে জুতা দিয়ে লিলু মিয়াকে পেটাতে থাকেন সুহেল আহমদ চৌধুরী। এক পর্যায়ে লিলু মিয়াকে পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেন সুহেল। কিন্তু লিলু মুখ দিয়ে বারবার তাকে ‘সরি সরি’ বলে যাচ্ছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, সুহেলের বাড়ির ড্রইং রুমে সাবেক ছাত্রদল নেতা নামধারী একজন লিলু মিয়াকে শাসাচ্ছেন। এবং কেন বিশ্বনাথ বিএনপি’র কমিটিতে তিনি নেই সে ব্যাপারে কৈফিয়তও চাচ্ছেন। তবে পরিস্থিতি বুঝে লিলু মিয়া তখন চুপ ছিলেন। এ ঘটনার জেরে শনিবার বিশ্বনাথ থানায় লিলু মিয়া একটি চুরির মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত পরিচয়ের সাত আটজনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত দুই আসামি করা হয়েছে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর আলম নামের এক যুবদল নেতাকে। বিশ্বনাথ থানার ওসি গাজী আতাউর রহমান জানিয়েছেন, বাদী লিলু মিয়া তার এজাহারে উল্লেখ করেছেন যে শুক্রবার রাতে পূর্ব বিরোধের জের ধরে বিশ্বনাথ রশিদপুর রোডের কারিকোনা মসজিদের কাছে আসামিরা বাদীকে আটকে রেখে মারধর করে টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিশ্বনাথ বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া জানিয়েছেন, তার সঙ্গে যা করা হয়েছে তা অমানবিক। কোনো মানুষের কাজ এটা হতে পারে না। কেউ পাগল হয়ে গেলে তাকে পাগলা গারদে রাখা উচিত। তাকে বাইরে রাখলে তো মানুষ আক্রান্ত হবেই। তিনি অবিলম্বে সুহেলের গ্রেপ্তার দাবি করেন। এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকে সুহেল আহমদ চৌধুরীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে ঘটনার পর পরই তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, গাড়ি ভাড়া নিয়ে বচসার জের ধরে এমন ঘটনা ঘটেছে। তিনি মালিক সমিতির সভাপতি হওয়ার কারণে এতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। তবে বিশ্বনাথ বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, সুহেল আহমদ ক্ষমতা হারানোর পর বিএনপি থেকেও আউট। ইলিয়াস পরিবারেও এখন তার ঠাঁই হচ্ছে না। এসব বিষয় নিয়ে সুহেল ও লিলুর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। তবে সুহেল যেভাবে লিলুকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেছেন সেটি রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা।
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
