• আজ রাত ৩:৪২, শুক্রবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  • shadinkhobor24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

সিলেটের যে ড্রয়িংরুম আর সরব হয় না

নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ: বুধবার, জুন ১৫, ২০২২ ৭:১৮ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: বুধবার, জুন ১৫, ২০২২ ৭:২৬ পূর্বাহ্ণ

 

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৪ ঘণ্টায়ই দরোজা খোলা থাকতো। ড্রয়িং রুমও থাকতো সরব। নানা প্রয়োজনে আসতেন মানুষ। পরামর্শ, তদবির, সালিশ বৈঠক, দাওয়াত সব কাজই ছিলো মানুষের। একজন বসে থাকতেন চেয়ারে। তিনি ছিলেন ওই ড্রয়িংরুমে মধ্যমণি। সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। কাজে আসা মানুষজন হাসিমুখে চলে যেতেন। গত দুই বছর ধরে শূন্য ওই ড্রয়িং রুম। মধ্যমণি নেই।

আগের মতো আর সরব হয় না। নানা কাজে আসা মানুষজন ভিড় করে না। এই মধ্যমণি হচ্ছেন সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। মারা গেছেন দুই বছর হলো। মহামারী করোনার আক্রান্ত হয়ে তিনি এই চিরতরে বিদায় নিয়েছেন। পড়ে আছে চিরচেনা এই ড্রয়িংরুম। বদলে গেছে দৃশ্যপটও। কাজে আসা মানুষের আনাগোনা নেই। পিতা স্মৃতিকে ধরে রাখতে মাঝে মধ্যে এসে বসেন ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু।
সিলেটের সাবেক এই মেয়রের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এখনো কামরান আছেন জনগণের হৃদয়ে। বিশেষ করে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা তার শূন্যতা অনুভব করছেন। ক’দিন ধরেই কামরানের ছবি সম্বলিত ব্যানার ঝুলছে নগরের অলিগলিতে। মহানগর আওয়ামী লীগের তরফ থেকে নগরে শোক-শ্রদ্ধা জানিয়ে এ ব্যানার টানানো হয়েছে। এবার দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা। ২০২০ সালে করোনাকাল শুরু হওয়ার পর প্রথমে পারিবারিক কারনে ছিলেন লন্ডনে। ব্যাপকভাবে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগেই তিনি চলে আসেন নিজের এলাকা সিলেটে। এসেই মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে কাজে নেমে পড়েন। নিজের পরিবারের উদ্যোগে প্রতিদিনই সাধারন মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করতেন। একই সঙ্গে দলীয় ও সামাজিক কর্মসূচিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন। ডাক্তার ছেলে শিপলুর নানা বারণ ছিলো। করোনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রিত রাখার চেষ্টাও ছিলো। কিন্তু কামরান সে বাধা মানেনি।

করোনার শুরুতেই তার স্ত্রী আসমা কামরান করোনা আক্রান্ত হন। এরপর কামরানকেও করোনায় গ্রাস করে। প্রথমে সিলেটের শামসুদ্দিনে, পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকার সিএমএইচে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি কামরানকে। ওই বছরের ১৫ই জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় কামরান ঢাকায় মারা যান। তার মৃত্যুতে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে শূন্যতা নেমে এসেছে। ওই শূন্যতা এখনো রয়েই গেছে। রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যেমন দলীয় নেতাকর্মীরা, তেমনি সামাজিক কর্মকান্ডেও সিলেটের মানুষ কামরানের শূন্যতা অনুভব করেন। কামরানের ড্রয়িং রুম ছিলো সিলেটের মানুষের নির্ভরতার জায়গা। সেখানে সব সময়ই মানুষের আনাগোনা থাকতো। কিন্তু তার মৃত্যুর পর নিরব হয়ে পড়েছে চিরচেনা সিলেটের ওই ড্রয়িংরুম। বড় ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালকও তিনি। মাঝে মধ্যে এসে শিপলু বসেন পিতার ড্রয়িংরুমে। নানা কর্মকান্ড তিনি পরিচালিত করেন এখানে বসে। ডা. আরমান আহমদ শিপলু জানিয়েছেন- ‘আব্বার ড্রয়িংরুম সিলেটের মানুষের কাছে পরিচিত। এখানে আব্বা বসতেন। মানুষজন আসতেন। তার মৃত্যুর পর বেশ কয়েক মাস তিনি শোকে কাতর ছিলেন। সংসার, রাজনীতি, পেশা কোনো দিকেই নজর রাখতে পারেননি। কিছুটা স্বস্তির পর তিনি মাঝে মধ্যে ড্রয়িংরুমে বসেন।’ তিনি জানান- ‘এখনো কিছু কিছু মানুষ তার বাসায় আসেন। তাদেরকে নিয়ে তিনি ওখানে বসেই নানা কাজ করেন। আব্বু যেভাবে ড্রয়িংরুমকে সাজিয়ে রেখেছিলেন সেভাবেই এখনো আছে।

এখানে সিলেটের নেতারা ছাড়াও অনেক জাতীয় নেতাও এসেছেন বলে জানান তিনি।’ দুই বছর হলো কামরান নেই। এখনো শোকে কাতর স্ত্রী আসমা কামরান। তিনি স্বামীর শোকে কাঁদছেন। তার কিছুই অগোছালো হয়ে গেছে। স্বাভাবিক হতে পারছেন। তিনিও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। শোক কাটিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেও পারছেন না। বাসার সবখানে তার কাছে কামরানের চিহৃ। মাঝে মধ্যে তিনি নিজেও এসে উকি দেন ড্রয়িংরুমে। নিরব ড্রয়িংরুম কাদেনও নিরবে। আসমা কামরান জানালেন- ‘কী আর এসব কিছু দিয়ে, মুল মানুষটিই তো নেই। সে তো চলে গেছে।’ দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকীতে নানা আয়োজন চলছে পারিবারিকভাবে। ছেলে শিপলু সহ আত্মীয়স্বজনরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কিন্তু স্বামীর জন্য নিরবে বসে কাদছেন আসমা কামরান। তার এই কান্না যেনো শেষ হতেই চায় না।

 
 
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ