সিলেটে দাপুটে শ্রমিক নেতা সেলিম আহমদ ফলিক কোণঠাসা
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, মার্চ ৪, ২০২২ ৬:২০ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, মার্চ ৪, ২০২২ ৬:২০ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
ছিলেন দাপুটে শ্রমিক নেতা। ইশারায় হতো আন্দোলন। রাস্তায় নেমে আসতো শত শত শ্রমিক। ডাক দিলেই হতো পরিবহন ধর্মঘট। তিনি সিলেটের পরিচিত শ্রমিক নেতা সেলিম আহমদ ফলিক। কিন্তু সেই পরিবহন শ্রমিক নেতা ফলিক এখন কোণঠাসা। জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের মসনদ হারানোর পর থেকে ক্ষমতাও কমে এসেছে। এরপর শ্রমিক ফেডারেশন, শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার শ্রমিক ইউনিয়নের প্রাথমিক সদস্য পদও হারালেন তিনি। তবে- বসে নেই ফলিক। তিনি বর্তমানে দায়িত্বে থাকা শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন। টানা কয়েক বছর সিলেটের পরিবহন সেক্টরকে একহাতে শাসন করেছেন পরিবহন শ্রমিক নেতা মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক। তিনি সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের একাধিকবারের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু করোনাকালের শুরু থেকে ফলিককে নিয়ে পরিবহন সেক্টরে ক্ষোভ দেখা দেয়। অভিযোগ তোলা হয় তহবিল তছরুপের। তবে- ফলিক বার বারই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে গেছেন। পরিবহন শ্রমিকদের আর্থিক প্রণোদনা প্রদান নিয়ে তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের বড় অংশটি ক্ষুব্ধ হওয়ায় কেন্দ্রেও ধীরে ধীরে ইমেজ হারান এ পরিবহন শ্রমিক নেতা। বছর খানেক আগে সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে সেলিম আহমদ ফলিকও সভাপতি প্রার্থী হন। তার সঙ্গে ক্ষুব্ধ থাকা শ্রমিকদের পক্ষে ময়নুল ইসলাম একই পদে প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে হেরে যান ফলিক। ফলে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কর্তৃত্ব চলে যায় পরিবহন শ্রমিক নেতা ময়নুলের হাতে। তার সঙ্গে যুক্ত হন ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। পাশাপাশি পরিবহন মালিক সমিতিও পেছন থেকে শক্তভাবে হাল ধরে। ফলে সিলেটেও কর্তৃত্ব হারান সেলিম আহমদ ফলিক। এরপর দায়িত্ব পালন কালে নানা অনিয়ম ও অবহেলার অভিযোগ এনে ফলিককে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি থেকে এবং পরবর্তীতে সিলেট বিভাগের সভাপতির পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। এই সরিয়ে দেয়াকে অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন ফলিক। তিনি সংগঠনের দায়িত্বে না থাকলেও শ্রমিকদের একাংশ নিয়ে বিরোধিতা করে আসছিলেন। পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান দায়িত্বে থাকা নেতারা জানিয়েছেন- সেলিম আহমদ ফলিককে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তখন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহজাহান খান এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী সমঝোতায় আসেন। তারা শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে উভয় অংশকে সংযমী হওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে দু’পক্ষের বিবদমান মামলা তুলে নেয়ার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ময়নুল অংশের পক্ষে দায়ের করা ৫টি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও ফলিক অংশ ৪টির মধ্যে একটি মামলাও প্রত্যাহার করেনি। গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক আব্দুল মুহিম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন- প্রথমে কেন্দ্রীয় নেতাদের এবং পরে গত ১৮ই অক্টোবর বিভাগীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন ফলিক। এর বাইরে গত ১লা মার্চ গোলাপগঞ্জ মাইক্রোবাস শ্রমিক উপ-কমিটিতে শ্রমিকদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে শ্রমিক নামধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে উপ-কমিটির কার্যালয় তালাবদ্ধ করে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলার পাঁয়তারা করেন। এ কারণে ২রা মার্চ কার্যকরী কমিটি এবং ৩রা মার্চ ৬৯টি উপ-কমিটির সমন্বয়ে সভায় সিদ্বান্ত মোতাবেক সেলিম আহমদ ফলিককে সংগঠনের সংবিধানের ৭- এর ক, খ ও ২৬ নং ধারা মোতাবেক ইউনিয়ন হতে বহিস্কার করা হয়েছে। এদিকে- সেলিম আহমদ ফলিকের এই বহিষ্কারাদেশ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে তোলপাড় চলছে। তবে- কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম গতকাল জানিয়েছেন- প্রথমবার বহিষ্কারের পর সেলিম আহমদ ফলিককে কিছুটা সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় নেতারা হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিলেও ফলিক মানেননি। উল্টো তিনি কেন্দ্রকেও এড়িয়ে যান। সর্বশেষ গোলাপগঞ্জের শ্রমিকদের মধ্যে বিরোধ ও উত্তেজনার ঘটনার পর সংগঠন থেকে ফলিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন তিনি আর সংগঠনের কেউ নন। তার সদস্যপদও নেই। তবে এই বহিষ্কারের বিষয়ে গতকাল সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক জানিয়েছেন- তাকে আইনিভাবে বহিষ্কার করা হয়নি। গায়ের জোরে এই বহিষ্কার করা হয়েছে। মালিক সমিতির নেতা পলাশ সহ একাংশের ইন্ধনে এসব হচ্ছে। সিলেটের পরিবহন সেক্টরকে কুক্ষিগত করে রাখতে এই প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এতে শ্রমিকদের স্বার্থ বিঘ্নিত হবে। তিনি বলেন- এসব বিষয়য়ে তিনি মাস খানেক আগে চট্টগ্রামে লেবার কোর্টে মামলা করেছেন। এখন আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। আর গোলাপগঞ্জের ঘটনায় তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং গোলাপগঞ্জে উত্তেজনার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন বলে জানান।