সিলেট বিএনপিতে বইছে ভোটের হাওয়া মাঠে সাবেক ছাত্রনেতারা
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
শুক্রবার, মার্চ ১১, ২০২২ ৭:০৮ অপরাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
শুক্রবার, মার্চ ১১, ২০২২ ৭:০৮ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
সিলেট বিএনপিতে বইছে ভোটের হাওয়া। গোটা জেলাজুড়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কাউন্সিলকে সামনে রেখে এমন গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পদে প্রার্থীদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে হবে লড়াই। আর এ লড়াইয়ে কাউন্সিলরদের রায়ে পদে আসীন হবেন নেতারা। এরইমধ্যে গঠিত নির্বাচন কমিশনও কাজ শুরু করেছে। ভোট গ্রহণের রূপরেখাও তুলে ধরেছেন তারা। তবে- এবারের নির্বাচনে পাঁচ পদে প্রার্থী হওয়া বেশিরভাগই হচ্ছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা।
দলের নেতৃত্ব নিতে তারা ছুটে চলেছেন জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভায়। প্রতিদিনই হচ্ছে গণসংযোগ, নির্বাচনী বৈঠক। আগামী ২১শে মার্চ সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল।
নেতারা জানিয়েছেন, এবারের কাউন্সিলেও প্রধান অতিথি হয়ে আসার কথা রয়েছে দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। এছাড়া কয়েকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য, সহ-সভাপতিসহ দলের সিনিয়র নেতারাও সিলেট আসতে পারেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার জানিয়েছেন, কেন্দ্রের নির্দেশে এবার কাউন্সিলরদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। জেলার আওতাভুক্ত ১৮টি ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অর্থাৎ প্রতিটি ইউনিটের ১০১ জন ভোট দিতে পারবেন। এতে দেখা গেছে- ভোটার সংখ্যা হবে ১৮১৮ জন।
এত ভোটারে অখুশী নয় প্রার্থীরা। সিলেট জেলা বিএনপি এখন চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। প্রায় আড়াই বছর বয়সী এই কমিটি। অনেক আগেই সম্মেলন করার কথা ছিল। কিন্তু করোনাসহ নানা কারণে সেটি করা সম্ভব হয়নি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর সরব হন জেলার নেতারা। তারা প্রথমে ইউনিয়ন, এরপর উপজেলা ও পৌর কমিটির সম্মেলন শেষ করেন। বলা হয়েছিল মার্চের প্রথম সপ্তাহে সম্মেলন হবে। দু’একটি শাখা কমিটি গঠনে বিলম্ব হওয়ার কারণে সেটি পিছিয়ে ২১শে মার্চ করা হয়েছে। হাতে সময় রেখেই সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
আর এই তারিখ ঘোষণার পর থেকে প্রার্থীরা ভোটযুদ্ধ শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে প্রচারণা। রীতিমত পোস্টার ছাপিয়ে এসব প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন প্রার্থীরা। তৃণমূলের নেতারা জানিয়েছেন, প্রার্থীরা সবাই আন্তরিক। সবাই যার যার যোগ্যতা তুলে ধরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কখনো কখনো একসঙ্গে গিয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এতে করে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ দেখা যাচ্ছে। এবারের কাউন্সিলে চমক হিসেবে উপস্থিত হলেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি এরইমধ্যে সভাপতি পদে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়েছেন। আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে তার পক্ষের নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণায় গতি বাড়িয়েছেন। নীরব ছিলেন আরিফ। হঠাৎ করেই হলেন প্রার্থী। এখন তার দিকেই কাউন্সিলরদের নজর বেশি।
সভাপতি পদে আরিফের মুখোমুখি হয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম ও যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী। আবুল কাহের শামীম সাবেক সভাপতি হিসেবে ইউনিটগুলোতে তার শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। আর ইউনিট সম্মেলনের শুরু থেকে আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী সরব থাকায় তারও ভোটব্যাংক বেড়েছে। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হওয়ার কারনে ভোটের মাঠে নীরব রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রনেতাদের আধিক্য বেশি। এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতিতে যারা রাজপথ কাঁপিয়েছিলেন তারাই হয়েছেন প্রার্থী। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, যুবদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান, জেলা বিএনপি নেতা কামরুল হাসান শাহীন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও আব্দুল আহাদ খান জামাল। তারা সবাই সাবেক ছাত্রদল নেতা।
ছাত্রদলের রাজনীতির শীর্ষ পদেও তাদের অনেকেই দায়িত্ব পালন করেছেন। আলী আহমদ সাবেক সাধারণ সম্পাদক থাকার কারণে উপজেলা ও পৌর বিএনপিতে তার আধিপত্য রয়েছে। আর কামরুল হাসান শাহীন এবারের কাউন্সিলকে নিয়েছেন চ্যালেঞ্জ হিসেবে। নেতৃত্বে আসতে তিনি ছুটে যাচ্ছেন উপজেলা ও পৌর শহরে। জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও আব্দুল আহাদ খান জামাল পরিশ্রমী ছাত্রনেতা ছিলেন। বিএনপিতেও তারা নিজেদের যোগ্যতা এরই মধ্যে মেলে ধরেছেন। এবারের উপজেলা ও পৌর কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিলে এই দুই নেতা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। এ কারণে কাউন্সিলরদের উপর আশাবাদী তারা। এদিকে- সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে দুই নেতা মাঠে নেমেছেন। এরা হচ্ছেন- জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আশিক চৌধুরী ও মকন মিয়া। দু’জনই কাউন্সিলরদের কাছে পরিচিত। যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে যারা প্রার্থী হয়েছেন সবাই সাবেক ছাত্রদল নেতা।
তারাও ছাত্রদলের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। বিএনপিতেও গত ৮-১০ বছরে তারা স্থান করে নিয়েছেন। যুগ্ম সম্পাদক পদে প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, ময়নুল হক, মাহবুবুল হক চৌধুরী, আফম কামাল, মতিউল বারী চৌধুরী খুরশেদ। সাবেক হওয়ার কারণে মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সলের আলাদা অবস্থান রয়েছে। তবে- ময়নুল হক ও মাহবুবুল হক চৌধুরী এবং আফম কামাল প্রচারণায় গতি বাড়িয়েছেন। সাংগঠনিক হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় এসেছে তারাও সাবেক ছাত্রদল নেতা। এরমধ্যে রয়েছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা শাকিল মোর্শেদ, লোকমান আহমদ, দক্ষিণ সুরমার বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম ও এডভোকেট মুজিবুর রহমান। প্রার্থীরা জানিয়েছেন, কাউন্সিলে ভোটার সংখ্যা বেশি। এতে কিছুটা কষ্ট হলেও তারা আনন্দিত। কারণ, কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন। এতে করে দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও সুসংহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তারা।