সুনামগঞ্জে বাঁধের কাজ শতভাগ শেষের ঘোষণা চায় হাওর বাঁচাও আন্দোলন
নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ:
বুধবার, মার্চ ১৬, ২০২২ ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ:
বুধবার, মার্চ ১৬, ২০২২ ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ
একে কুদরত পাশা, সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ সঠিক সময়ে শেষ না হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটি। বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটায় ধৈনিক সুনামকণ্ঠ কার্যালয়ে জেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি অলিউর রহমান বকুলের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশা, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক আনোয়ারুল হক, হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি আলী হায়দার, চন্দন রায়, সদস্য এম আর শামিম, শান্তিগন্জ উপজেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক জিয়াউর রহমান প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মান কাজ ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রæয়ারি ২০২২ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা আমাদের সকল উপজেলা কমিটি, ইউনিয়ন কমিটি ও আপনাদের সংবাদ মাধ্যমে বুঝতে পারছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেনি কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি। নির্ধারিত সময় শেষে ১০ দিন বাড়িয়ে ১০ মার্চ কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এসময়েও হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি ১৫ ডিসেম্বর আপনাদের নিয়ে যেভাবে বাঁধের কাজ শুরু করেছিলেন সেভাবে আপনাদের আবার নিয়ে বাঁধের শত ভাগ কাজ সমাপ্তির ঘোষণা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
এবার বাঁধের কাজে শুরু থেকেই একধরনের ঢিলেমি লক্ষ করা গেছে। মাঠপর্যায়ে গণশুনানি করে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের দাবি থাকলেও, সেটি করা হয়নি। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবে পিআইসি গঠন করা হয়। এতে প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তাদের একটা যোগসাজশ থাকে। যে কারণে ওই ব্যক্তিরা কাজে গাফিলতি করেন। আমরা মনে করি কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য কৃষকের হাওরের ধানকে হুমকির মূখে ফেলে দিয়েছেন। এবার কৃষকের ধান ঘোলায় তুলতে কোন সমস্যা হলে এর দায় কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটিকেই নিতে হবে।
পিআইসি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রতিটি উপজেলাতেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিলে প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন দিয়ে সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। শাল্লা উপজেলায় ফসল রক্ষা বাঁধের প্রকল্প গ্রহণে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় বাহারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টুর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনিয়ম ও দুনীতির অভিযোগ এনে দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছেন রফিনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর চৌধুরী। জনশ্রোতি রয়েছে জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমঝোঁতা করেছে কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি। সব মিলিয়ে বাঁধকে কেন্দ্র করে দুনীর্তির একটি মহোৎসব চলছে জেলার প্রতিটি উপজেলায়।
সাংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, সুনামগঞ্জে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নির্ধারিত সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রæয়ারি। জেলার ১১টি উপজেলায় ৪১ টি হাওরের ৭২৪ টি প্রকল্পে ১১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বাঁধের কাজ নিজের পছন্দমতো লোককে দিয়েছেন তার জ্বলন্ত একটি উদাহরণ শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের ৩ নং পিআইসি। বান্ডাবিল হাওর উপ-প্রকল্পের ৩ নং পিআইসির মাধ্যমে ২৭৩ মিটার বাঁধের অধিকাংশ অক্ষত বাঁধে ১৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির পছন্দের মানুষ প্রকল্পের সভাপতি শান্ত কুমার দাস, সদস্য সচিব বকুল আহমদ ও সদস্য আনিছুল ইসলাম চৌধুরী মুনকে দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন এ তিন জন কোন কৃষক নন বা এ হাওরের তাদের কোন জমি নেই। শাল্লা উপজেলার ৯নং প্রকল্পে এখনও মাটির কাজ চলমান। ১৮, ১৯, ২৩, ২৮, ৩৫, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ১২৮, ১২৯ ও ১৩০ নং পিআইসির কাজে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তাহিরপুর উপজেলার ৬৩ নং পিআইসিতে কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সাথে আতাত করে উপজেলার কাউকান্দি গ্রামের আইন উদ্দিন পিতার নাম পরিবর্তন করে এ প্রকল্পের সভাপতি হন। তাহিরপুর উপজেলার ৬৩ ও ৬৪ নং প্রকল্পের মাটির কাজ এখনও শেষ হয়নি। অধিকাংশ বাঁধে মাটির কাজ শেষ হলেও দুরমুজ করা হচ্ছে না, ¯েøাপ ঠিককরা হচ্ছে না ঘাস লাগানো হচ্ছে না। এ অবস্থায় বৃষ্টি নামলে বাঁধ ধ্বসে যেতে পারে। জামালগঞ্জ উপজেলার ০৭ ও ০৮ নং পিআইসিতে এখনও মাটিকাটা চলমান। মহালিয়া, মুচিবাড়ির খাল ও বগলাখালি ক্লোজারে মাটির কাজ মোটামোটি শেষ হলেও অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে না। দিরাই উপজেলার ৭৯ নং পিআইসিতে মাটির কাজ শেষ হয়নি। অধিকাংশ বাঁধে এলোপাথারি মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। ১৪ মার্চ কুলঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন বাঁধ পরিদর্শণ করে দেখা যায় মাটির কাজ শেষে অন্যান্য কাজ করছেন পিআইসি সদস্যরা। তারা জানান উপজেলা থেকে জানানো হয়েছে ৩১ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ০১ নং পিআইসিতে এখনও মাটির কাজ চলমান। ০২ ও ০৩ নং পিআইসিতে মাটির কাজ করে রাখা হয়েছে বাকী কাজ করা হচ্ছে না। এ রকম পিআইসি অনেক রয়েছে। ২৭ নং পিআইসি বালি দিয়ে বাঁধ তৈরী করা হয়েছে। আশে পাশে মাটি থাকলেও টাকার বিনিময়ে গ্রামের মানুষের পুকুর খনন করে ফ্রি বালি এনে বাঁধ তৈরী করা হয়েছে। মিয়ারচর যাদুকাটা নদীর তীর ক্লোজারে কাজ শেষ হয়নি। চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি নামলে এক্লোজার দিয়ে যে কোন সময় হাওরে পানি প্রবেশ করবে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৫০ নং পিআইসিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রথমে এ প্রকল্প ছিল ৭৭৫ মি.যার বরাদ্দ ছিল ১৯.৯৬ লাখ। পরবর্তীতে এ প্রকল্পে ৩৩০ মি করা হয় কিন্তু বরাদ্দের জায়গায় করা হয় ১৯,৭৫,৪৪০.৪৮ টাকা। কাজ কমেছে ৪৪৫ মি. কিন্তু বরাদ্দ কমেছে মাত্র ২০ হাজার ৫শ ৬০ টাকা। ৪২-৪৯ নং পিআইসি অধিকাংশ জায়গায় অক্ষত বাঁধে দুর্বাঘাস পরিস্কার করে মাটি খুরেরাখা হয়েছে। দুর থেকে নতুন বাঁধ মনে হলেও সেখানে রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। অনুরূপভাবে জামখলার হাওর পিআইসি নং ০৪, ০৫, ০৬ এ কাজ করা হয়েছে। কাঁচিভাঙ্গা হাওরের ০৯ নং পিআইসি, সাংহাই হাওরের ১৩ নং পিআইসি, খাই হাওরের ২৪ নং পিআইসি, কাওয়াজুরি হাওরের ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ পিআইসিতে নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করা হয়নি। শুধু টাকা উত্তোলনের জন্য দায়সারভাবে কাজ করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ১৮ ও ১৯ নং পিআইসিতে এখনও কাজ চলমান। উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে কিছু বাঁধের কাজ চলছে যেগুলো হাওর রক্ষায় কোন কাজে আসবে না তবে এলাকার মানুষের চলাচলের রাস্তা হবে। ছাতক উপজেলার ০৩, ০৪ ও ১০ নং পিআইসিতে এখনোও মাটির কাজ চলমান। ১৭, ১৮ ও ১৯ নং পিআইসিতে এলোপাথারি মাঠি ফেলে রাখা হয়েছে। মাটি দুরমুজ করা হয়নি। ১৮ নং পিআইসি মাটি ভরাট করার পরই ফাটল ধরে মাটি ধ্বসে যাচ্ছে।
সাংবাদিকদের অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, হাওরের বোর ফসল রক্ষায় প্রক্কলন পূর্ব থেকেই আমরা কৃষকের পক্ষে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছি। যা আপনার প্রচার ও প্রকাশ করেছেন। আমরা বলছি অনতি বিলম্ভে হাওরের বোর ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করে শতভাগ কাজ শেষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে হবে। অন্যতায় হাওরে বিপর্যয় ঘটলে এর দায় কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটিকেই নিতে হবে। আমরা হাওরের বিষয়ে এবার আইনের আশ্রয়নেবো। পরবর্তীতে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবো। আশা করি হাওরের কৃষকদের পক্ষে আপনাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।