• আজ সন্ধ্যা ৬:৫০, রবিবার, ১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
  • shadinkhobor24@gmail.com
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে চিপায় আছেন গলাচিপার এমপি, টিকার দাম ভুলে গেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, স্বাধীন খবর ডটকম
প্রকাশের তারিখ: সোমবার, জুন ৬, ২০২২ ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ পরিবর্তনের তারিখ: সোমবার, জুন ৬, ২০২২ ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

 

পটুয়াখালীর গলাচিপার সংসদ সদস্য এস এম শাহাজাদা (পটুয়াখালী-৩) স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে চিপার মধ্যে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদে। রোববার সংসদের প্রশ্নোত্তরে নিজের নির্বাচনী এলাকার জীর্ণশীর্ণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র পুনর্নির্মাণের প্রস্তাবকালে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এ মন্তব্য করেন।

এদিকে প্রশ্নোত্তরকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, করোনার টিকার দাম তার মনে নেই। অবশ্য এর আগে সংসদে একাধিকবার করোনার টিকার দাম জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদকে জানান, ‘নন-ক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’–এর মাধ্যমে টিকা কেনায় সংসদে অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা সমীচীন হবে না।’

এর আগে স্পিকার  শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রোববার সংসদের প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়। করোনা সংক্রমণের কারণে গত প্রায় দুই বছর সম্পূরক প্রশ্ন নেওয়া হতো না। রোববারের বৈঠকে সম্পূরক প্রশ্ন নেওয়া হয়।

সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে পটুয়াখালীর সংসদ সদস্য এসএম শাহাজাদা বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার দুটি উপজেলা, তার একটির নাম গলাচিপা। এই উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে নামের সাথে সাথে কিছুটা চিপার মধ্যেই পড়ে গেছি।’

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার ভাগনে সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা বলেন, ‘গলাচিপাতে যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি আছে, সেটা বেশ আগের। এটা জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় আছে। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে একাধিক ভবন রয়েছে সেগুলো জীর্ণশীর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়েছে। এই উপজেলায় পাঁচ লাখ জনসংখ্যা। পার্শ্ববর্তী রাঙাবালি উপজেলায়  আরও প্রায় আড়াই লাখ লোক রয়েছে। দুই উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা পরিচালনা হয় এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে।’ তিনি জানতে চান এখানে নতুন স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ হবে কি না, হলে সেটা কবে।

জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকার জীর্ণশীর্ণ সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র নতুন করে নির্মাণ করে দিচ্ছে। ওই উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্র সে ধরনের হলে সরকার তা পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেবে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, জেলা সদরগুলোতে আধুনিক হাসপাতাল হচ্ছে। আধুনিক ভৌত অবকাঠামো হচ্ছে। কিন্তু অভিজ্ঞ জনবল নেই। এনেসথেসিস্ট নেই। যন্ত্রপাতি নিম্নমানের। অনেক জায়গায় চিকিৎসকের অভাবে নার্সরা অপারেশন করেন। উপজেলা হাসপাতালে রোগী গেলে তাদের জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জেলা হাসপাতালে গেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকায়।

জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখন আধুনিক এক্সরে মেশিন দেওয়া হয়েছে। তবে এনেসথেসিস্টের অভাব রয়েছে এটা সত্য। দীর্ঘ দিনের ঘাটতি পূরণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কিছু চিকিৎসক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পর্যযায়ে কোনো অভিজ্ঞ চিকিৎসক নেই। তিনি জানতে চান কবে চিকিৎসক সংকট কাটবে। অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে, অনেক জায়গায় দলীয় বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বর্তমান সরকার দলীয় বিবেচনায় কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এটি করত বিএনপি। তারা কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছিল।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, তাঁর এলাকায় একটি হাসপাতালে একটি মাত্র অপারেশন থিয়েটার আছে। কিন্তু সেখানে কোনো অপারেশন হয় না।

সরকারি দলের সদস্য শাজাহান খান বলেন, তাঁর এলাকায় আড়াইশ’ শয্যার হাসপাতাল হয়ে গেছে। কিন্তু তা চলছে ৫০ শয্যার চিকিৎসক দিয়ে।

বিকল্প ধারার সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকায় উপজেলা হাসপাতাল ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত নার্স নেই। প্রসূতি মায়েদের  অপারেশন হচ্ছে না।

উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও নার্স সংকটের কথা স্বীকার করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, আরও দেওয়া হবে। উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকদের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মসিউর রহমান বলেন, রংপুর হাসপাতালে কিডনি ডায়ালেসিস ও ক্যানসার চিকিৎসার যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সাল থেকে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকাটা দুখজনক। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্ভব হলে যন্ত্র ঠিক করা হবে না হলে নতুন যন্ত্রপাতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

করোনার টিকার দাম মনে নেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার প্রায় ৩০ কোটি ৫০ লাখ করোনা টিকা সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ১৮ কোটি টিকা নগদ টাকায় কেনা হয়েছে। বাকিগুলো কোভেক্সের আওতায় বিনামূল্যে পাওয়া গেছে। তবে টিকার দামের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টিকার দামগুলো এখন মনে নেই। এ বিষয়ে আমাকে নোটিশ দিলে এর দাম এবং কোথা থেকে এসেছে সেটা বলতে পারবো।’

সরকারি দলের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশের ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে কোভিড টিকা প্রদানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ৫ বছরের ওপরের সব জনগোষ্ঠীকে পর্যায়ক্রমে টিকা প্রদান করা হবে। এ পর্যন্ত (১ জুন ২০২২) ১২ কোটি ৮৭ লাখ ৭৩ হাজার ৪৩৬টি প্রথম ডোজ, ১১ কোটি ৭৬ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭১ টি দ্বিতীয় ডোজ ও ভাসমান জনগোষ্ঠীকে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৯১৮টি টিকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এক কোটি ৫২ লাখ ৮৯ হাজার ৬১০টি বুস্টার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।

সরকারি দলের আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ দেশেই উৎপাদিত হয়। বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রায় সব ধরনের ওষুধ রপ্তানি করা হয়। চলতি অর্থ বছরের (২০২১-২২) এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার ৩২ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৪০৯ টাকার ওষুধ রপ্তানি করা হয়েছে।

সংসদের সম্পূরক প্রশ্নে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের মাত্র ৪১ শতাংশ ব্যয় হয়েছে উল্লেখ করে কি কারণে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় করা যায়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কাছে জানতে চান বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।

জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে কিছু কাজ ব্যাহত হয়েছে। এই খাতে শ্রমের মূল্য প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটের ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে ৪০ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি জুন মাস শেষের আগে ৯০ শতাংশের বেশি খরচ হয়ে যাবে এবং লক্ষ্য অর্জন হয়ে যাবে। কারণ এখনো অনেকগুলো বিলের অর্থ পরিশোধ হয়নি। অনেকগুলো মাল এখনো পৌঁছায়নি যেগুলোর বিল দেওয়া হয়নি। এগুলো এই জুনের আগে সমাধান হয়ে যাবে।

নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তার স্বার্থে ওষুধের গুণগত মান বজায় রাখা ও মান নিয়ন্ত্রণে সরকার সব সময় সচেতন রয়েছে।  নকল, ভেজাল নিম্নমানের ওষুধ বিক্রয়, আনরেজিস্টার্ড ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোরতা অবলম্বন করেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোবাইল কোর্টে ২ হাজার ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩০০টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

 
 
স্বাধীন খবর ডটকম/আ আ
 

জনপ্রিয় সংবাদ

 

সর্বোচ্চ পঠিত সংবাদ